মুক্তিযু'দ্ধের চেতনায় গণতন্ত্র ও সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মহান মুক্তিযু'দ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সকল অ'পশক্তির বি'রুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকার বিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন। একইভাবে করো'না মহামা'রির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার উপর জো'র দিয়ে তিনি বলেন,“ মহান বিজয় দিবসে এই হোক আমাদের সুদৃঢ় অঙ্গীকার।”

প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।

তিনি বলেন,“বাংলাদেশ এবং ইউনেস্কো যৌথভাবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী' উদ্যাপন করছে। আগামী বছর আম'রা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। আসুন, মহান মুক্তিযু'দ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সকল অ'পশক্তির বি'রুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকার বিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করি।”

শেখ হাসিনা বলেন, ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির এক অনন্য গৌরবোজ্জ্বল দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি দীর্ঘ তেইশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নয় মাসের র'ক্তক্ষয়ী মুক্তিযু'দ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। ৫০তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে তিনি দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অ'ভিনন্দন জানান। কৃতজ্ঞতা জানান সেইসব দেশ ও ব্যক্তিবর্গের প্রতি যাঁরা আমাদের মুক্তিযু'দ্ধে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছেন। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্ম'রণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্ম'রণ করেন জাতীয় চার নেতা, ত্রিশ লাখ শহীদ, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের-কে, যাঁদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আম'রা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি বায়ান্ন’র ভাষা আ'ন্দোলন, বাষট্টি’র শিক্ষা আ'ন্দোলন, ছেষট্টি’র ৬-দফা, ঊনসত্তরের ১১-দফা ও গণঅভ্যুত্থ্যানের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পা'কিস্তানিরা বাঙালি জাতিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেয়নি। জাতির পিতা অনুধাবন করেন, স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতির ওপর অ'ত্যাচার, নি'র্যাতন ও বঞ্চনার অবসান হবে না। তাই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মা'র্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আ'ন্দোলন। চলতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিযু'দ্ধের প্রস্তুতি।

শেখ হাসিনা বলেন, পা'কিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মা'র্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হ'ত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ২৬ মা'র্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরুহয় সশস্ত্র মুক্তিযু'দ্ধ। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ মুজিবনগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইস'লামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহম'দকে প্রধানমন্ত্রী করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে মুক্তিযু'দ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের র'ক্তক্ষয়ী যু'দ্ধের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার এবং তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন। আম'রা পাই লাল-সবুজের পতাকা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন যু'দ্ধবি'ধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যু'দ্ধাপরাধী চক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হ'ত্যা করে। এই জঘন্য হ'ত্যাকা'ন্ডের মধ্য দিয়ে তারা হ'ত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধু হ'ত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। মা'র্শাল ল’জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হ'ত্যা করে। স্বাধীনতাযু'দ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে বি'কৃত করে, ভূলুণ্ঠিত করে মুক্তিযু'দ্ধের চেতনা। সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার এই ধারা অব্যাহত রাখে।

‘বর্তমান বাংলাদেশ বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। মা'থাপিছু আয় ২০০৫-০৬ সালের ৫৪৩ মা'র্কিন ডলার হতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২,০৬৫ মা'র্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।

তিনি বলেন,‘ আম'রা সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযু'ক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ,গ্রামীণ অর্থনীতি এবং কূটনীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ সড়ক- রেল-নৌ বিমান যোগাযোগ ক্ষেত্রে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আম'রা পৃথিবীর ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট-প্রযু'ক্তির অ'ভিজাত দেশের কাতারে যু'ক্ত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি; উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। আম'রা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আম'রাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি।

জ'ঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নারী নি'র্যাতন ও মা'দক নির্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করেপ্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার হ'ত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। জাতিকে ক'লঙ্কমুক্ত করতে যু'দ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। ভা'রতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করা হয়েছে। মিয়ানমা'র ও ভা'রতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা'রও শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছেন।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলেও বলেন তিনি। সূত্র: বাসস

Back to top button
error: Alert: Content is protected !!