আমা'র হাতের ওপর মা'রা যান মা: উত্তরায় বেঁচে যাওয়া রিয়া
রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেট'কারে গার্ডার পড়ার ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে ফেরেন নবদম্পতি হৃদয় ও রিয়া। প্রাথমিক চিকিৎসার পর এখন শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও চোখের সামনে ৫ স্বজন হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তারা।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমকে সেই ট্র্যাজেডির হৃদয় বিদারক বর্ণনা দেন বেঁচে ফেরা নববধূ রিয়া মনি।
কা'ন্নাজ'ড়িত কণ্ঠে এই নববধূ বলেন, ‘বৌভাত শেষে আমা'র শ্বশুর বললেন, তোমাদেরকে আমা'র গাড়ি দিয়ে পৌঁছিয়ে দিয়ে আসব। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন আমা'র শ্বশুর। তার পাশে ছিলেন আমা'র স্বামী হৃদয়। গাড়ির পেছনে বাম পাশে আমি, মাঝে আমা'র মা এবং তার পাশে আমা'র খালা বসেন। খালার কোলে তার মে'য়ে এবং আমা'র মায়ের কোলে খালার ছে'লে ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় স্লাবটি ওপরে ঝুলানো অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলাম। স্লাবটির নিচ দিয়ে গাড়ি যাওয়া-আসা করছে। আমাদেরটার সঙ্গে এমনটা হবে, সেটা তো বুঝতে পারিনি। গাড়িটি স্লাবটির নিচে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, সেটি গাড়ির ওপর পড়ে। গাড়িটির বেশিরভাগই স্লাবটির নিচে চাপা পড়ে যায়। ’
‘আমা'র মা, খালা, শ্বশুর আর খালাত ভাই-বোনের ঘটনাস্থলেই মৃ'ত্যু হয়। মা আমা'র হাতের ওপরেই ছিলেন। নাকে-মুখে র'ক্ত এসে মা আর কথা বলতে পারেননি। আমা'র শ্বশুরের শুধু হাতটা দেখা গেছে। আমা'র খালাত ভাই ঘুমাচ্ছিল। ঘুমেই সে মা'রা গেল।’ বলতে গিয়ে কেঁদে দেন রিয়া।
তিনি আরও বলেন, ‘আশপাশের লোকজন এসে গাড়ির কাচ ভেঙে হৃদয়কে বের করে। আমি পুরোপুরি গাড়িতে আ'ট'কা পড়েছিলাম। পরে গাড়ির দরজা ভেঙে আমাকে বের করা হয়। এরপর আমাদেরকে হাসপাতা'লে নেয়া হয়। সারা রাত হাসপাতা'লেই ছিলাম।’
‘পরে জেনেছি, যে ক্রেন দিয়ে তারা কাজ করছিলেন, সেটার ধারণ ক্ষমতাও ওই কাজের জন্য উপযু'ক্ত না। ওই স্লাবের লোড বহন করার ক্ষমতা সেই ক্রেনের ছিল না। শুধু আমাদের সঙ্গেই তো না, এ ধরনের ঘটনা তো আরও অনেকই হচ্ছে। একটা ব্যস্ত রাস্তায় তারা এমন বোকার মতো কেন কাজ করবেন? তারা তো মানুষের জীবন নিয়ে খেলছেন! কাজ করবে ঠিক আছে, কিন্তু রাস্তাটা তো ব্লক করে দেয়া উচিত ছিল। এ ঘটনার বিচার চাই,’ যোগ করেন রিয়া।
পু'লিশ জানায়, সোমবার (১৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এক পথচারীর মাধ্যমে দুর্ঘ'টনার খবর পান তারা। প্রাইভেট'কারটিতে ৭ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের ৫ জনই মা'রা গেছেন।
নি'হতরা হলেন- হৃদয়ের বাবা রুবেল (৬০), হৃদয়ের শাশুড়ি ফাহিমা (৪০), রিয়া মনির খালা ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)।
পরে, উ'দ্ধার অ'ভিযানে ভা'রী যন্ত্রপাতি নিয়ে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিস। গার্ডারটি তুলতে ২০০ টনের ক্রেন আনতে দেরি হয় বেশ কিছুটা সময়। সবশেষ ৪ ঘণ্টা পর, উ'দ্ধার করা সম্ভব হয় ৫ জনের ম'রদেহ।
যে ক্রেনটি দিয়ে গার্ডারটি তোলা হচ্ছিল তার ধারণক্ষমতা কম ছিল বলেও জানায় এমআরটি প্রকল্পের কর্মক'র্তা ও ফায়ার সার্ভিস।
এর আগে, গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে একই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নি'হত হন। এতে একজন শ্রমিক ও একজন পথচারী আ'হত হন।