সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে তা সংবিধানে বলা নেই: নির্বাচন কমিশনার
এবার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, সংবিধানে বলা আছে যারা আগ্রহী তাদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, এ কথা কিন্তু সংবিধানে বলা হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার ২৫ আগস্ট নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন ইসি আলমগীর। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, কোনো দলের হয়তো সক্ষমতা নাও থাকতে পারে। আমাদের দিনক্ষণ গুনে নির্বাচন করতে হবে। কোনো দলের বা একাধিক দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকতে পারে। অ'পেক্ষা করুন, এখনো এক বছর সময় আছে, তারা আসতেও পারে। মো. আলমগীর বলেন, কোনো একটা দল না এলেও আমাদের নির্বাচন করতে হবে। না হলে সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য দায়ী হবো। আম'রা বলব কোনো দল এলেও নির্বাচন হবে, না এলেও নির্বাচন হবে। কারো নাম উল্লেখ করব না। আম'রা বলব, কোনো দল না এলেও নির্বাচন হবে।
এদিকে বিএনপি ও জা'পা ইভিএম চায়নি, তাদের বাইরে রেখে নির্বাচন করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে ইসি বলেন, আম'রা তো তাদের বাইরে রাখতে চাই না। ৩৯টি দলের কথাকেই আম'রা মূল্যায়ন করেছি। আমাদের দৃষ্টিতে সবাই সমান। উনারা কী' বলেছেন তা আমাদের কাছে রেকর্ড আছে। সেগুলোর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে দেখা গেছে বেশিরভাগ দল ইভিএমের পক্ষে বলেছে। সুতরাং কারো কথা আম'রা উপেক্ষা করেছি এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো একটি দলকে নির্বাচনে আনা বা না আনার দায়িত্ব ইসির নয়। সংবিধানের কোথাও আমাদের এ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
সংসদ নির্বাচনে ইভিএম কোথায় ব্যবহার হতে পারে— জানতে চাইলে সাবেক এ সচিব বলেন, কারও কারও মতামত আছে শহরে যেহেতু শিক্ষিত লোক বেশি, প্রশিক্ষণ শহরে দেওয়া হয়েছে। সিটিসহ অন্যান্য নির্বাচন হয়েছে শহরে, তাই শহরে ইভিএম দেওয়ার মতামত আছে। অনেকেই বলেছেন, গ্রামে না দিলে তো তারা জানতে পারবেন না। অনেকে আবার বলেছেন গ্রামেও তো আম'রা নির্বাচন করেছি, তাই গ্রামে দিলেও অ'সুবিধা হবে না। এসব আলোচনা হয়েছে। ফাইনাল হবে তফসিলের সময়।
ইসি আলমগীর বলেন, বর্তমানে সক্ষমতা আছে ৭০ থেকে ৮০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করার। কতটা হবে তখন বলা যাবে। দেখা গেল মেশিন হয়েছে বা সক্ষমতা নেই তাহলে ৭০-৮০টাও হতে পারে, আবার ৫০টাতেও হতে পারে। তবে ১৫০টির ওপরে হবে না। মিনিমাম ধরে রাখেন ৭০-৮০টা। কোনো কারণে যদি আম'রা নতুন মেশিন কিনতে না পারি, কেননা হার্ডওয়ার পুরোটাই বিদেশ থেকে আসে। তারা যদি না দিতে পারে। তখন হয়তো আর কিনতে পারব না। আবার ফান্ড যদি না পাই তাহলেও তো কিনতে পারব না। ১৫০টি আসনের জন্য আনুমানিক আরও প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ ইভিএম কিনতে হবে। বিদেশি কোম্পানি কত দাম চায়, প্রশিক্ষণের বিষয় আছে, ওই সময় ডলারের দাম কত থাকবে এসব বিষয় নিয়ে প্রকল্প নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, অবশ্যই দলের যারা সংলাপে এসেছেন তাদের মতামত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আম'রা যেখানে ব্যবহারে করেছি সেখানে অ'ভিজ্ঞাতা কী'। এজন্যই দলগুলোর মতামত গুরুত্ব দিয়েছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সেটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। আম'রা গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভোটাদের ফিলিংসও আমলে নিয়েছি। দলের মতামতের বিশ্লেষণ, আমাদের ৬০০ নির্বাচনে ভোট করার অ'ভিজ্ঞতা ও ভোটারদের ফিডব্যাক আমলে নিয়ে ইভিএম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আস্থার সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচন কমিশন আস্থা অর্জন করেছে, তা বলা যাবে না। কোনো বিচারক দুই পক্ষে রায় দিতে পারবেন না। ইসিও আইন-কানুন ফলো করে ন্যায় যেটা আসবে সেটাই করবে। সুতরাং নির্বাচন কমিশন উভ'য় পক্ষকে খুশি করার সক্ষমতা রাখে না। স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসনসহ চার মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে আনা বাস্তবে সম্ভব না। কেননা, তখন সচিব সাহেব কমিশন না মন্ত্রীর কথা শুনবেন। এটাতে একটা আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে। তবে নির্বাচনের সময় যে সব সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে আইনে, সেটা দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। আমাদের নির্দেশ না মানলে শা'স্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা আছে আইনে।
এদিকে সে'না মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা ইভিএমে কারিগরি সহায়তা দিতে ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। এছাড়া অন্য কোনো ভূমিকায় রাখার সুযোগ নেই। যেখানে প্রয়োজন আছে, সেখানে ডাকলে চলে আসবে। কেননা, তাদের কাজ বাদ দিয়ে তো তাদের নামাতে পারবো না। এতো লোকবল তো তাদের নেই। পু'লিশ, বিজিবি, আনসারের মতো তো প্রতি কেন্দ্রে তাদের রাখা সম্ভব নয়। আম'রা তাদের সহায়তা নেবো। সরকারকে সে বিষয়ে প্রস্তাব দেবো। সে সহায়তা দেওয়ার তাদের আইন অধিকার আছে এবং আমাদের নেওয়ার অধিকার আছে তার পুরোটাই নেব। আইন অনুযায়ী, তারা সহায়তা দিতে বাধ্য।পু'লিশ যখন উত্তেজিত জনতাকে কন্ট্রোল করতে না পারলে সে'নার সহায়তা চাওয়া হয়। সেটাই নিয়ম। সেটাই আইনে বলা আছে।